Home ফ্যাক্টচেকজাতীয় আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস

আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস

by shikshabani

১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই দিনে বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা প্রথমবারের মতো সম্মিলিতভাবে যৌথ অভিযান পরিচালনা করেন। সম্মিলিত এই অভিযানের কারণে পাকিস্তানি শত্রু বাহিনীকে প্রতিহত করে মুক্তির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তিন বাহিনীর সমন্বিত আক্রমণ বিজয়কে ত্বরান্বিত করে। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর এই অবদানকে অবিস্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদায় ২১ নভেম্বর পালিত হয় সশস্ত্র বাহিনী দিবস। এবারে দিবসটির গভীর তাৎপর্য রয়েছে। চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ছিল অনন্য। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনী সমর্থন না দিলে ইতিহাস অন্যরকম হতে পারত।

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের ইতিহাস: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ প্রথম দিকে শুরু হয়েছিল সীমিত আকারে, বিচ্ছিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণের মধ্য দিয়ে। পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমানবাহিনীর বাঙালি সদস্যরা তাদের নিজ নিজ ইউনিট পরিত্যাগ করে বাংলাদেশ বাহিনীতে এসে যোগদান করেন। এরপর ভারতীয় ভূখণ্ডের সীমান্তের ওপারে প্রাথমিকভাবে স্থল বাহিনী হিসেবে নিয়মিত ইউনিটে সংগঠিত করে। নৌ-কমান্ডোদের একটি ছোট দলও নৌ শাখা খুলেছিল এবং কয়েকজন পাইলট এবং বিমানবাহিনী এয়ার উইং গঠন করেছিল। এভাবে তিন বাহিনীর সুশৃঙ্খল আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পরে এক মাসের কম সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন হয়।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার বাণী: সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জাতীয় সংকট মোকাবিলায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতাসহ জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ডে সশস্ত্র বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেন, এ বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্ববোধ, ধৈর্য ও দেশপ্রেম সাধারণ মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছে। কেবল দেশেই নয়, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে পেশাগত দক্ষতা, সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে চলেছেন। সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বন্যা, খরা, ঝড়, বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়সহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সশস্ত্র বাহিনী দুর্গত জনগণের শেষ ভরসার স্থান। বরাবরের মতো এবারও দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা, শিল্পকারখানায় নিরাপত্তা প্রদানসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, অস্ত্র উদ্ধারসহ সব কার্যক্রমে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানের জন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সব সদস্যকে প্রধান উপদেষ্টা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীসহ সব বীর শহীদের প্রতি তিনি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

দিবসের কর্মসূচি: ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা আজ সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

প্রধান উপদেষ্টা ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধান উপদেষ্টার জন্য নির্ধারিত নিজস্ব কার্যালয়ে তিন বাহিনী প্রধানদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন এবং কিছু সময় অতিবাহিত করে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরবর্তী সময়ে বাহিনী প্রধানরা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

You may also like

Leave a Comment