এইচএমপিভি! বছর পাঁচেকের বিরতি। ফের আতঙ্কের ছায়া? সেই লকডাউন? ফিরে আসবে দু:স্বপ্নের অতীত? নেপথ্যে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (সংক্ষেপে এইচএমভিপি ভাইরাস)। চিনে দ্রুত লাফিয়ে বাড়চ্ছে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। ভারতেও সোমবার সকালে আট মাসের এবং তিন মাসের দুই শিশুর শরীরে এই ভাইরাসের উপসর্গ পাওয়া গিয়েছে। যা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। যদিও চিনে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের সাথে বেঙ্গালুরুতে পাওয়া এইচএমপি ভাইরাসের সংক্রমণের কোনও সূত্র নেই বলে মন্তব্য করেছে কেন্দ্র। কিন্তু আমজনতার মনে তিন বছর আগের কোভিড ১৯-এর আতঙ্ক এখনও কাটেনি । তাই এইচএমপিভি ভাইরাস নিয়েও জনমনে ক্রমশ বাড়ছে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা। কিন্তু সত্যি কি নয়া ত্রাস এই ভাইরাস? এইচএমপিভি ভাইরাসের উপসর্গ, সতর্কতা অবলম্বন সহ যাবতীয় বিষয়ে বিশদে জানালেন ন্যাশনাল অ্যালার্জি অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস ইনস্টিটিউটের মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডাঃ আলোক গোপাল ঘোষাল ।
কতটা আতঙ্কের এইচএমপিভি ভাইরাস?
বিশিষ্ট চিকিৎসকের মতে, এইচএমপিভি ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০০১ সালেও এটি চিহ্নিত হয়েছিল। এর কোনও মিউটেশন হয়েছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি। তবে গত ৫০ বছর ধরে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব মানব সভ্যতাতে রয়েছে। চিনে যেহেতু কোভিড ১৯ আগে দেখা গিয়েছিল আর চিনেই এই ভাইরাসের উপদ্রবও শুরু হয়েছে, তাই খানিকটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যদিও চিন জানিয়েছে, এটা মরশুমি প্রকোপ। মহামারী ঘোষণার মতো জায়গায় আসেনি। কোভিড ১৯ একেবারে অন্য ধরনের ভাইরাস ছিল।
এইচএমপিভি ভাইরাস
উপসর্গ কী কী
ডাঃ আলোক গোপালের মোতে , আমাদের শরীরে কম-বেশি সব ভাইরাসের উপস্থিতি একইভাবে প্রকট হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু-এর যে সব উপসর্গ থাকে এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও সেগুলি দেখা যায়। যেমন গলা ব্যথা, সর্দি-কাশি, মাথা ব্যথা, গা-হাত-পা ব্যথা, জ্বর, বুকে সাঁই সাঁই শব্দ, দুর্বলতা হতে পারে।
কখন বাড়বাড়ন্ত
ডাঃ ঘোষালের কথায়, বেশিরভাগ ভাইরাসই মরশুম বদলের সময়ে বিশেষত শীতকালে মাথাচাড়া দেয়। বায়ুদূষণ বা বাতাসের ধরন পরিবর্তন হওয়ার কারণেই শীতকালে এদের প্রকোপ বাড়ে। কখনও কখনও শরৎকালেও প্রকট হয়। এইচএমপিভি ভাইরাসের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
কাদের বিপদ
চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশু এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তবে চিন্তার কারণ নেই। বিশেষত স্কুলে বাচ্চারা একসঙ্গে থাকার সময়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সতর্ক হওয়া জরুরি
আতঙ্কের বিষয় না হলেও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। কোভিড আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছিল, যা আমরা এই কয়েকদিনে ভুলে যাচ্ছিলাম। তা আবার মনে করার সময় এসেছে। চিকিৎসকের মতে, যা যা মেনে চলা উচিত-
- স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। সাধারণত হাঁচি কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়।
- এছাড়া সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও ছড়াতে পারে। কোথাও হাত দিলে অবশ্যই হাত ধুয়ে মুখে, চোখে হাত দিন।
- বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
- হাঁচি, কাশির সময় রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে নিন।
- ধূমপান ত্যাগ করুন।
- বাচ্চাদের সর্দিকাশি হলে স্কুলে না পাঠানোই শ্রেয়।
- শিশু ও বয়স্ক উভয়ের শরীরে কোনও উপসর্গ দেখা দিলে, বিশেষত শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হলে দ্রুত সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।