ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় জবা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা আব্দুস সোবহান মন্ডল কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার হঠাৎ এই অন্তর্ধানে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সমিতির প্রায় তিন হাজার সঞ্চয়কারী সদস্য।
গত শুক্রবার (২ মে) থেকে সমিতির কার্যালয় তালাবদ্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
অভিযুক্ত আব্দুস সোবহান মন্ডল সমিতিটির প্রতিষ্ঠাতা ও মূল পরিচালক। তিনি বর্তমানে পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ফুটানি টাউন এলাকার নারায়ণপুর শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সোবহান মন্ডল কয়েক বছর আগে উপজেলা সমবায় অফিস থেকে অনুমোদন নিয়ে পৌর শহরের আমতলা সালেহা সুপার মার্কেটে ‘জবা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এরপর প্রায় ৩ হাজার সদস্যের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকার মতো সঞ্চয় সংগ্রহ করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাতে তিনি শহরের কলেজ বাজার এলাকার ভাড়া বাসা থেকে মালপত্র ট্রাকে তুলে নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন বিষয়টি টের পেয়ে কিছু সদস্য ট্রাক আটক করলেও আব্দুস সোবহান পালিয়ে যান।
পরদিন শনিবার সকাল থেকেই শত শত ভুক্তভোগী তার গ্রামের বাড়ি শেখপাড়ায় ভিড় জমাতে থাকেন। তাকে না পেয়ে রোববার পর্যন্ত অনেকে সমিতির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
ভুক্তভোগী মুদি দোকানদার রতন মোল্লা জানান, তিনি ওই সমিতিতে ১৫ লাখ টাকা সঞ্চয় করেছিলেন। কার্যক্রম ভালো চললেও প্রতিষ্ঠাতা হঠাৎ পালিয়ে যাওয়ায় সবাই বিপদে পড়েছেন। সঞ্চিত অর্থ হারিয়ে অনেকেই চোখের জলে ভেঙে পড়েছেন।
মোবাইল ব্যবসায়ী মাসুদ রানা জানান, কয়েক বছর ধরে তিনি অল্প অল্প করে ৭ লাখ টাকা সঞ্চয় করেছেন। তার মতো আশপাশের অনেক দোকানদারই এই সমিতিতে টাকা রেখেছিলেন। প্রতিষ্ঠাতা ব্যক্তি কার্যালয়ে তালা দিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় সবাই হতাশ।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাপ হোসেন জানান, সমিতিটি দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল এবং মানুষের মধ্যে একধরনের আস্থা তৈরি করেছিল। গ্রামের বহু মানুষ সেখানে নিয়মিত সঞ্চয় করতেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার উধাও হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শ্রমিক নেতা লিয়াকত আলী বলেন, এ ঘটনায় কয়েক হাজার সঞ্চয়কারী অসহায় হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, তিনি ঘটনাটি জানেন না। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন এবং ভুক্তভোগীদের থানায় লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।