ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন তার বাঁচার কথা ছিলো না বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়ালের এক্সিকিউটিভ এডিটর অমল সরকারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই প্রথম কোন গণমাধ্যমে কথা বললেন ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি খুবই ভাগ্যবান, সেদিন আমার বেঁচে থাকার কথা ছিলো না। মৃত্যু থেকে অনেক কাছে ছিলাম। সংসদ এলাকায় আমার নিজের বাসাকে এড়িয়ে পাশ্ববর্তী আরেকটা বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। তখন চারদিক থেকে মিছিল আসছিলো। এটা আসলে ছিলো প্রধানমন্ত্রীর (সাবেক) গণভবন কেন্দ্রিক।
তিনি বলেন, আমরা অবাক হলাম যে, সংসদ এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে মিছিল এবং একটা ‘লুটপাটের লুম্পেন স্টাইল’-এ কতগুলো ঘটনা ঘটে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের লোক আসে এবং এদের মধ্যে বেশিরভাগই মনে হয়েছে এটা কোন রাজনৈতিক..অভ্যুত্থানে.। এটা ‘লুটপাটের..অভ্যুত্থান।
যেভাবে বেঁচে গেলেন ওবায়দুল কাদের
তিনি বলেন, আমি যে বাসাটায় ছিলাম, তারা সেখানেও হামলা করে। তারা জানত না যে সেখানে আমি আছি। আমার বাসা তারা লুটপাট করেছে, কিন্তু যে বাসায় আমি গিয়ে আশ্রয় নিলাম, সেখানে হামলা করবে আমি ভাবতে পারিনি। দেখলাম অনেক লোকজন ঢুকে পড়েছে। তারা ভাঙচুর ও লুটপাট করতে থাকে। আমি ও আমার স্ত্রীসহ বাথরুমে লুকিয়ে ছিলাম। অনেকক্ষণ ছিলাম, প্রায় ৫ ঘণ্টা। তারপর একটা পর্যায়ে তারা বাথরুমের ভেতর কমোড-বেসিনগুলো লুটপাট করেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার স্ত্রী তখন বাথরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বারবার বলছিলেন যে আমি অসুস্থ, যাতে করে তাদের প্রবেশ ঠেকানো যায়। কিন্তু তারা জোরপূর্বক ভেতরে ঢোকার হুমকি দিতে থাকে, বাথরুমে কী আছে তা লুট করতে চায়। এই অবস্থায় আমার স্ত্রী আমাকে জিগেস করে, কী করবো? আমি বললাম, দরজা খুলে দাও।
এরপর ৭-৮ জন যুবক ভেতরে ঢোকে, এবং তারা অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে আচরণ করতে থাকে। হঠাৎ তারা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘নেত্রীতো চলে গেলেন, আপনি যাননি কেন?’ আমি তখন কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু এর মাঝেই তারা আচরণ পাল্টে ফেলে। কেউ একজন বলে, ‘আপনার ছবি তুলবো’, তারপর শুরু হয় ছবি তোলা, কেউ কেউ সেলফিও নেয়। ধারণা করি, এদের মধ্যে অনেকেই আমাকে চিনতো।
তিনি জানান, ঠিক কী কারণে প্রথমে তাদের মধ্যে এতো আক্রমণাত্মক মনোভাব ছিল, আর কেন হঠাৎ করে সেই আচরণ শীতল হয়ে গেলো – তা তিনি বুঝে উঠতে পারেননি। আচমকাই তারা ঠান্ডা মাথায় কথা বলা শুরু করে। তাদের মধ্যেই একটা গ্রুপ চেয়েছিলো তাকে রাস্তায় নামিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে। আবার কেউ কেউ চেয়েছিল জনতার হাতে তুলে দিতে। এই পরিস্থিতি তার মনে গভীর চাপ ও মানসিক ভাঙন সৃষ্টি করে। এরপর তারা তাকে একটি শার্ট, লাল পতাকাসংবলিত ব্যাজ এবং মুখে কালো মাস্ক পরিয়ে সংসদ এলাকা থেকে গণভবন অভিমুখী বড় রাস্তায় হাঁটিয়ে নিয়ে যায়। ইঠাৎ কোথা থেকে একটি খালি ট্যাক্সি বা ইজি বাইক এসে হাজির হয় -সেই মুহূর্তে রাস্তায় কোন গাড়ি ছিলো না। তিনি মনে করেন, এটি হয়তো তার ভাগ্যের বিষয় ছিলো।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই সেতুমন্ত্রী বলেন, তাদের মধ্যে দু’জন তাকে ও তার স্ত্রীকে সেই গাড়িতে তোলে এবং পথে যেতে যেতে চারপাশের চেকপোস্ট ও লোকজনকে উদ্দেশ্য করে বলে, চাচা-চাচি অসুস্থ, হাসপাতালে নিচ্ছি, বিরক্ত করবেন না। এইভাবেই তারা তাকে দূরের একটি জায়গায় নিয়ে যায়।